Image description

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা গত ১৭ বছরে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও এ বিষয়ে নীরব ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, একমাত্র আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মাঝে মাঝে দু-একটি কথা বলেছেন।
 
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারবর্গকে সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন। আইইবি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এখন যাঁরা উপদেষ্টা রয়েছেন, তাঁদের কেউ গত ১৭ বছর শেখ হাসিনার অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। একমাত্র আসিফ নজরুল মাঝে মাঝে দু-চারটি কথা বলেছেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস—দেশ বরেণ্য ব্যক্তি, আমরা সকলে তাঁকে শ্রদ্ধা করি, তিনি হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে একটি কথা কখনো বলেন নাই।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রধান কারণ হলো, অভ্যুত্থানের পর যে সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে, তারা শহীদদের চেতনাকে ধারণ করে না। তিনি আরও বলেন, ‘সব সময়ই বিপ্লবে যাঁরা জীবন দেন, বিজয়ের পরে তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। বারবার জীবন দেয় সাধারণ মানুষ, আর এর ফলাফল ভোগ করে একশ্রেণির কুটিল রাজনীতিবিদরা।’

তিনি অভিযোগ করেন, যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করেনি, তারাই এখন পাদপ্রদীপের আলোয় এসে জাতিকে উপদেশ দিচ্ছে।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন কি পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে হবে নাকি আসনের পদ্ধতিতে হবে, এটির জন্য মানুষ জীবন দেয়নি। মানুষ জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন দেওয়া।’

হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে নাই অনির্বাচিত ব্যক্তিরা সংবিধান সংশোধন করে। এখানে সেটাই প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। জনগণ ও সংসদের সম্মতি ছাড়া কীভাবে এরা সংবিধান সংশোধন করতে চায়।’

বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা ছিলাম ৮০ হাজার। আর এখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আড়াই লক্ষ (লাখ)। এটির কৃতিত্ব আওয়ামী লীগকে দিতে হবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ যখনই সময় পেয়েছে, আত্মীয়-স্বজনদের এই তালিকায় ঢুকিয়েছে।

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, সাবেক বিচারপতি এবং ৬০০ পুলিশ কর্মকর্তাকে সেনানিবাসে আশ্রয় দিয়ে সেনাবাহিনী ঠিক কাজ করেনি। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে এমন আন্দোলন হয়েছে, মসজিদের খতিব পর্যন্ত পালিয়ে গেছেন।

একই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন ফ্যাসিবাদবিরোধীদের মধ্যে ঐক্যের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা দেশের ভেতর থেকেও হচ্ছে, বাইরে থেকেও হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরান, পতিত স্বৈরাচার কিন্তু বসে নেই। তাদের কাছে লুণ্ঠিত অর্থ আছে; তাদের সুবিধা ভোগ করা দোসররা এখনো আছে। তাদের কাছে আছে বিভিন্ন বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। কাজেই মনে রাখতে হবে, ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।’

জাহিদ হোসেন সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যারা কথায় কথায় সমালোচনা করেন, তার আগে আয়নায় নিজেদের মুখ দেখবেন। পত্রপত্রিকায় তো এখন অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে। বাংলাদেশের মানুষ এসব পছন্দ করে না। কাজেই আমার মনে হয়, যাঁরা নিজেদের দায়িত্বশীল মনে করেন, আগামী দিনের রাজনীতি করতে চান; তাঁদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে।’